ফুসফুসের স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা হলে প্রথমেই আসে ধূমপানের কথা। কারণ ধূমপান সরাসরি ফুসফুসে ক্ষতি করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপানই একমাত্র ক্ষতিকর নয়, আমাদের আরো কিছু প্রতিদিনের অভ্যাসও ফুসফুসের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। চলুন, জেনে নিই। বায়ু দূষণ দূষিত বাতাসে থাকা ক্ষতিকর কণা ও গ্যাস শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঢুকে হাঁপানি, ক্যান্সার ও দীর্ঘমেয়াদি অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষ করে খনি বা নির্মাণস্থলে কাজ করা ব্যক্তিরা ধুলাবালি, বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসের সংস্পর্শে থাকেন, যা ফুসফুসের বড় ক্ষতি করে। দীর্ঘদিন এমন পরিবেশে কাজ করলে নিউমোকোনিওসিস নামক রোগ হতে পারে, যা ফুসফুসে স্থায়ী দাগ ফেলে ও শ্বাসকষ্টের কারণ হয়। দিনভর বসে থাকা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করলে শুধু শরীর নয়, ফুসফুসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
এতে সহজেই শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ বেশি অ্যালকোহল শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে ফুসফুস সহজে সংক্রমিত হয়। এতে মিউকোসিলিয়ারি ক্লিয়ারেন্স বাধাগ্রস্ত হয় ও ফুসফুসের টিস্যু দুর্বল হয়ে পড়ে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল, শাকসবজি, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিন ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। অন্যদিকে অতিরিক্ত লবণ, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি-জাতীয় খাবার ফুসফুসের প্রদাহ বাড়ায় ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়। পানি কম পান করা প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি না খেলেও ফুসফুসে প্রভাব পড়ে।
শ্বাসনালি আর্দ্র রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ গ্লাস পানি পান জরুরি। ভুল বসার ভঙ্গি কাজের সময় অনেকেই সামনে ঝুঁকে বা গা ভেঙে বসেন, যা ফুসফুসের জন্য ভালো নয়। ফুসফুসকে সঠিক জায়গা দিতে চেয়ারে সোজা হয়ে বসা, বুক সোজা রাখা এবং গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
ফুসফুসের সুস্থতায় করণীয়:
১। ধূমপান থেকে দূরে থাকুন। ২। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ৩। সুষম খাবার খান। ৪। প্রচুর পানি পান করুন। ৫। দূষণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। ৬। দীর্ঘ সময় বসে থাকলে মাঝে মাঝে হাঁটুন বা দাঁড়িয়ে কাজ করুন। ফুসফুস শুধু শ্বাস নেওয়ার অঙ্গ নয়, এটি আমাদের প্রাণশক্তির অন্যতম ভরকেন্দ্র। তাই প্রতিদিনের জীবনযাপনে সচেতন না হলে, নিঃশ্বাসেই আসতে পারে বিপদ।

