অনেক সময় আমাদের দেশে মা-বাবাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। তারা মনে করেন, দুধের দাঁত তো স্থায়ী নয়, এক সময় এটি পড়েই যাবে। সে কারণে এই দাঁতে কোনো গর্ত বা সমস্যা হলে তা ফিলিং বা অন্য কোনো চিকিৎসা না করিয়ে দাঁত তুলে ফেলেন। তবে দুধের দাঁত যদি তার স্বাভাবিক সময়ের আগেই পড়ে যায়, তাহলে তা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দাঁতের যেমন যত্ন নেওয়া উচিত, দুধের দাঁতেরও ঠিক সেভাবেই যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। বরং এই দাঁতের ব্যাপারে আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার।
অনেক বাচ্চার ঘুমের মধ্যে খাওয়ার অভ্যাস থাকে, যা থেকে দাঁতে ক্যাভিটি বা ক্যারিস তৈরি হয়। এমন অনেক শিশু আছে, যারা মায়ের বুকের দুধ খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়ে। ল্যাকটোব্যাসিলাস এবং স্ট্রেপটোকক্কাস মিউট্যানসনামক ব্যাকটেরিয়াগুলোই দাঁতে গর্ত বা ডেন্টাল ক্যারিস তৈরির জন্য দায়ী। মিষ্টি জাতীয় খাবার, দুধ বা এ ধরনের কোনো খাদ্য যদি দীর্ঘক্ষণ দাঁতের গায়ে লেগে থাকে, তাহলে সেখানে ব্যাকটেরিয়াগুলো বংশ বৃদ্ধি করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে, যা দাঁতের ওপরের এনামেলকে ক্ষয় করে ফেলে এবং দাঁতে গর্তের সৃষ্টি হয়। বাচ্চাদের মধ্যে খুব সাধারণ একটি দাঁতের রোগের নাম হলো ‘নার্সিং বোতল সিনড্রোম’ বা ‘আর্লি চাইল্ডহুড ক্যারিস’। এ ক্ষেত্রে সাধারণত বাচ্চার সামনের দাঁতগুলোতে গর্ত হয়ে যায়। অনেক সময় গর্ত বড় হতে হতে দাঁতের ভেতরের নার্ভ, যাকে পাল্প বলা হয়, সেখানে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন শুরু হয় এবং বাচ্চার দাঁতে তীব্র ব্যথা হয়। তখন সময়মতো দাঁতগুলোর সঠিক চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। যদি গর্ত ছোট হয়ে থাকে, তাহলে দাঁত ফিলিং করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জিআই (গ্লাস আয়নোমার) নামে একটি ফ্লুরাইড নিঃসরণ ক্ষমতাসম্পন্ন ফিলিং ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়, যা দাঁতের ক্যারিস তৈরি হওয়া থেকে বিরত রাখে।
যদি গর্ত অনেক বড় হয়, তখন পালপোটমি বা পালপেকটমি (বড়দের রুট ক্যানাল চিকিৎসার মতো) চিকিৎসা করে সেই দুধের দাঁতকে রক্ষা করা হয়, যাতে তা স্বাভাবিক বয়সে পড়ে। কোনো দুধের দাঁত যদি স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগেই পড়ে যায় বা দেরিতে পড়ে, তাহলে এর নিচে থাকা স্থায়ী দাঁতটি আঁকাবাঁকা হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে দাঁত উঁচু-নিচু বা ফাঁকা হতে পার; যাকে ম্যালঅক্লুশন বলা হয়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে দুধের দাঁত তার স্বাভাবিক বয়স পর্যন্ত রক্ষা করা জরুরি।
মা-বাবার অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চাকে রাতে খাওয়ানোর পর মুখ কুলি করিয়ে পরিষ্কার করে দেওয়া। যদি শিশু খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে কোনো ভেজা কাপড় দিয়ে দাঁতগুলো আলতো করে মুছে দিতে হবে। বছরে দু’বার বাচ্চাকে কোনো ডেন্টিস্টের কাছে নিয়ে চেকআপ করালে তাদের ভবিষ্যৎ দাঁতগুলো সুন্দর ও সুস্থ থাকবে।

